গ্যারিনা free fire হল একটি বিশ্ব বিখ্যাত মোবাইল গেম। এটি অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস উভয় সিস্টেমের জন্য উপলব্ধ। ভারতে এই গেমের বিপুল চাহিদা আছে। এটি ভারতের জনপ্রিয় ব্যাটেল রয়েল গেমগুলির মধ্যে অন্যতম। সারা বিশ্বের মধ্যে কেবল ভারতে এই গেমের বেশী ফ্যান বেস আছে। Garena free fire গেমটি লঞ্চ হওয়ার পর থেকে প্লেস্টোরে সবথেকে বেশী রেটিং এবং ডাউনলোডের তালিকায় আছে। এই ব্যাটেল রয়েল গেমে প্লেয়াররা নিজেদের দক্ষতা দিয়ে অস্ত্র এবং সম্পদ অর্জন করতে পারে। সেজন্য খুব অল্প সময়ের মধ্যে গেমটি বিশ্বে ট্রেন্ডিং গেম হয়ে উঠেছে।
সিঙ্গাপুর কোম্পানী ১১১ ডটস ষ্টুডিও গ্যারিনা free fire গেমটি তৈরী করেছে। ফ্রি ফায়ার গেমটি পঞ্চাশ জন প্লেয়ার দশ মিনিট রাউন্ড করে খেলতে পারে। নির্মাতারা প্রায় এই গেমের স্ট্রীমারদের জন্য প্রতিযোগীতার আয়োজন করে। এরফলে গেমটি ছোটো থেকে বড়ো সব ধরণের গেমারদের খুব পছন্দের।
এই গেমের সবথেকে বেশী স্ট্রীমার লক্ষ্য করা যায় ভারতে। গেমটি ভারত সহ সারা বিশ্বে বেশী জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ২০২১ সালে অক্টোবর মাসে। কিন্তু ভারত সরকার ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২ সালে ফ্রি ফায়ারকে ব্যান করে। এর আগে ২০২০ সালে ২রা সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পাবজি মোবাইলকে ব্যান করেছিলো। পাবজি মোবাইল ছিলো গ্যারিনা ফ্রি ফায়ারের অনুরুপ একটি গেম।
ভারতে গ্যারিনা ফ্রি ফায়ার ব্যান (garena free fire banned in india)
ফ্রি ফায়ারের মতো পাবজি মোবাইল ছিলো ভারতে একটি জনপ্রিয় গেম। কিন্তু ২০২০ সালে ২রা সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে পাবজি মোবাইলকে ব্যান করা হয়। গেমটি ব্যান হওয়ার পিছনে কারন ছিলো ভারতের সঙ্গে চিনের সংঘর্ষ। সেই কারনে ভারত সরকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ৫৪টি চাইনিজ অ্যাপ সহ পাবজি মোবাইলকে ব্যান করে। এরফলে গেমারদের কাছে তখন ফ্রি ফায়ার গেমটি পছন্দের তালিকায় যুক্ত হয়। পাবজি মোবাইলের পরে ফ্রি ফায়ার গেমটি ধীরে ধীরে পপুলার হয় ভারতে।
ভারতে ফ্রি ফায়ার গেমটির সবথেকে বেশী গেমার আছে। পাবজির নির্মাতা ক্র্যাফটন ফ্রি ফায়ারকে টেক্কা দিতে ২০২১ সালে ২রা জুলাই ব্যাটেলগ্রাউন্ডস মোবাইল ইন্ডিয়া লঞ্চ করে। কিন্তু এরজন্য ভারতে ফ্রি ফায়ারের জনপ্রিয়তা কমে যায়নি। এরপরে ক্র্যাফটন ফ্রি ফায়ারের নামে গেম নকলের অভিযোগ করে।
এই ঘটনার কিছু মাস পরে প্লেস্টোর থেকে ফ্রি ফায়ার গেমটি গায়েব হয়ে যায়। তখন মনে করা হয়েছিলো কোনো সার্ভারজনিত ত্রুটির জন্য এই সমস্যা হয়েছে। কিন্তু পরে জানা যায় ভারত সরকার ৫৩টি চিনা অ্যাপের সাথে ফ্রি ফায়ারকে ব্যান করেছে। এই ঘটনায় ভারতীয় গেমিং ইন্ডাস্ট্রীতে বিরাট বিপর্যয় ঘটে।
ভারতে গ্যারিনা ফ্রি ফায়ার ব্যান হওয়ার কারণ (garena free fire banned reason in india)
ব্যাটেল রয়েল গেম পাবজি মোবাইল ছিলো ভারতের সবথেকে পপুলার গেম। কিন্তু ২০২০ সালে ২রা সেপ্টেম্বর পাবজি চিরতরে বিদায় নেয়। তখন ভারতে ব্যাটেল রয়েল গেম হিসাবে ফ্রি ফায়ার বিখ্যাত হয়ে ওঠে। সেই বিখ্যাত গেম ফ্রি ফায়ার আবার প্লেস্টোর থেকে গায়েব হয়ে যায়। হঠাৎ করে ভারত সরকার ফ্রি ফায়ার গেমটিকে ব্যান করে।
১) কিশোরের আত্নহত্যা
ভারত সরকারের ইলেকট্রনিক্স মন্ত্রকের তরফে ফ্রি ফায়ার গেমটিকে ব্যান করা হয়। ফ্রি ফায়ার গেমটিকে ব্যান করা হলেও অনুরুপ গেম ফ্রি ফায়ার ম্যাক্সকে ব্যান করা হয়নি। ফ্রি ফায়ার গেম ব্যান হওয়ার পিছনে মূল কারণ মনে করা হয় একটি ১৪ বছর বয়সের কিশোরের আত্নহত্যা। ব্যান হওয়ার আগের দিন ১৩ ফেব্রুয়ারি সেই কিশোরটি আত্নহত্যা করে। কারণ হিসাবে জানা যায় ওই কিশোরটি ফ্রি ফায়ার গেম খেলতে না পারায় আত্নহত্যা করেছে। কিশোরটির পরিবারের লোকজন তাকে ফ্রি ফায়ার গেমটি খেলতে না দেওয়ায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
২) গ্যারিনার সাথে চিনের সংযোগ
এই কারনে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে গেমটিকে ব্যান করে। এছাড়া গেমটি ব্যানের আরো একটি কারণ মনে করা হচ্ছে গেমটির নির্মানকারী সংস্থার সঙ্গে চিনের সংযোগ। সিঙ্গাপুর কোম্পানী সি লিমিটেড ফ্রি ফায়ার গেমটি তৈরী করে। এই সি লিমিটেড কোম্পানী নাকি চিনা কোম্পানী টেনসেন্টের সাথে চুক্তিবদ্ধ। সি লিমিটেডের গ্যারিনায় চিনা টেনসেন্টের প্রায় ২০ শতাংশ শেয়ার আছে। সেই কারণে গুগেল ভারত সরকারের নির্দেশে প্লে স্টোর থেকে ফ্রি ফায়ার গেমটিকে সরিয়ে দেয়।
এই জনপ্রিয় ব্যাটেল রয়েল গেমটি ইউজারদের সংবেদনশীল ডেটা বিনা অনুমতিতে সংগ্রহ করত। তাছাড়া এই সংগৃহীত ডেটাগুলিকে ইউজারের অনুমতি ছাড়া অন্য দেশের সার্ভারে পাঠানো হত। তাই ভারত সরকার দেশের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার জন্য গেমটিকে ব্যান করে।
পড়ে দেখুন – Free Fire Max-কে কম্পিউটারে কীভাবে ডাউনলোড করবে ?
পড়ে দেখুন – বিশেষ ৬টি কারণের জন্য Free Fire নতুন ম্যাক্সের থেকে আলাদা
ফ্রি ফায়ার ব্যান নিয়ে গ্যারিনার অফিশিয়াল বিবৃতি (garena official statement on free fire ban)
গ্যারিনা ফ্রি ফায়ারের নির্মাতা কোম্পানী হল সিঙ্গাপুরের সি প্রাইভেট লিমিটেড। এই কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন ফরেস্ট লি। তিনি চিনে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু পরে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা হয়। তাই গ্যারিনার প্রশ্ন ফ্রি ফায়ার চিনা অ্যাপ না হওয়ার সত্ত্বে কেন ব্যান করা হল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার জানায় দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা এবং ভারতবাসীর শৃঙ্খলা রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
একইভাবে ২০২০ সালে ইউজারের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা চুরির অভিযোগে পাবজি মোবাইলকে ব্যান করা হয়েছিলো। তবে এই পরিস্থিতিতে সিঙ্গাপুর কোম্পানী সি লিমিটেড জানায় চিনের সঙ্গে তাদের কোনোরকম যোগাযোগ নেই। কোম্পানীটি তাদের একটা বিবৃতিতে বলেছে ” সি প্রাইভেট লিমিটেড একটি সিঙ্গাপুরের স্থায়ী কোম্পানী যার সাথে চিনা কোম্পানী টেনসেন্টের কোনো যোগাযোগ নেই এবং তারা ভারতের ডিজিটাল এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি আইন অনুযায়ী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তারা আরও জানায় ভারত সহ সারা বিশ্বের সমস্ত ইউজারদের নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য চিনে কোনো ডেটা বা তথ্য স্টোর বা ট্রান্সফার করা হয় না। “
পরিশেষে :
গ্যারিনা ফ্রি ফায়ার নিয়ে কিন্তু কোম্পানীর প্রাইভেস পলিসি বা গোপনীয়তা নীতিতে ইউজারের ডেটা সর্ম্পকে পরিস্কারভাবে বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে কোম্পানী কোনো ভারতীয় গেমারের ডেটা অন্য কোনো কোম্পানীকে প্রদান করে না। সমস্ত ভারতীয় গেমারের ডেটাগুলো সিঙ্গাপুর কোম্পানীর ডেটা সার্ভারে সংগ্রহ করা হয়। কেবলমাত্র গোপনীয়তা অ্যাক্ট অনুযায়ী এবং গেমারদের অনুমতি গ্রহণ করে তবে ডেটা ট্রান্সফার করা হয়। ভারত সরকারের থেকে পরিস্কার নিশ্চিতভাবে ফ্রি ফায়ার ব্যান নিয়ে কোনো বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তবে ফ্রি ফায়ার ব্যান নিয়ে আপনাদের কোনো মতামত থাকলে নীচে কমেন্ট করে জানাবেন।